দীর্ঘ ১২ বছর পর ঢাকা সফরে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার

পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে, আলোচনায় বাণিজ্য ও ঐতিহাসিক ইস্যু

দীর্ঘ ১২ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সরকারি সফরে আজ ঢাকায় আসছেন। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শুক্রবার ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

শনিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছেই অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ইসহাক দার। এই বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উঠে আসবে।

সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করা। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এই সফরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কূটনীতিক এবং সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসামুক্ত যাতায়াত চুক্তি। এছাড়া, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, দুই দেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা, ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একাধিক সমঝোতা স্মারক সই হবে।

দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তিটিও নবায়ন করা হবে। এই চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পথ আরও প্রশস্ত হবে।

তবে এই সফরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হতে পারে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা, স্বাধীনতা-পূর্ব অভিন্ন সম্পদের অংশীদারি এবং আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার মতো সংবেদনশীল ও ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর আলোচনা। কূটনৈতিক সূত্রমতে, এসব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে কথা হতে পারে।

এছাড়াও, ইসহাক দার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

সর্বশেষ ২০১২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এর দীর্ঘ ১২ বছর পর এই উচ্চপর্যায়ের সফরটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং পাকিস্তানি পণ্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে, যা এই সফরকে আরও অর্থবহ করে তুলছে।

সবকিছু মিলিয়ে, ইসহাক দারের এই সফরকে অনেকেই দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন।