প্লট দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলসহ আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

ঢাকা, ১১ আগস্ট – রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে আজ সোমবার ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এই সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মীর আহমেদ আলী সালাম জানান, এই তিনটি মামলার বাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে সমন জারি করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আজ তারা আদালতে উপস্থিত হবেন। তিন মামলার বাদী হিসেবে রয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং এস এম রাশেদুল হাসান।

গত ৩১ জুলাই একই আদালত এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। ওইদিন আসামিরা আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এই তিনটি পৃথক মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জন, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জন এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এই মামলাগুলো নিয়ে জনমনে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠায় রাজনৈতিক মহলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই মামলার ফলাফল কী হবে, তা জানতে অনেকেই উদগ্রীব। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই মামলার সত্যতা উদঘাটন হবে বলে আশা করা যায়।

এই মামলার অভিযোগগুলো হলো, ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতায় থাকাকালীন নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে তার পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠজনদের প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। এসব প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো স্বচ্ছতা ছিল না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, “আমরা ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করছি। আমরা আশা করি, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”

আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের এই প্রক্রিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হতে পারে। সাক্ষীরা তাদের বক্তব্য পেশ করবেন এবং আইনজীবীরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এরপর বিচারক সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে রায় দেবেন। এই মামলার রায় বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

এই মামলার বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। এটি প্রমাণ করে যে, আইন সবার জন্য সমান এবং কেউই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। তবে, এই মামলার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েও বিতর্ক চলছে। বিরোধী দলগুলো এই মামলার বিচারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে সরকার সমর্থকরা বলছে, এটি আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।