ভারতে আইফোন বিপ্লব: টাটার নেতৃত্বে উৎপাদন বাড়াচ্ছে অ্যাপল
ভারতীয় টেক জায়ান্ট টাটা গ্রুপ এবার অ্যাপলের সাথে এক বিশাল অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আইফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারতের আইফোন উৎপাদনের অর্ধেকের বেশিই আসবে টাটার কারখানাগুলো থেকে। এই পদক্ষেপটি শুধুমাত্র টাটার জন্যই নয়, সমগ্র ভারতের প্রযুক্তি খাতের জন্যও একটি মাইলফলক।
মার্ক গুরম্যান, যিনি একজন পরিচিত অ্যাপল বিশেষজ্ঞ, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর একটি প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। তার মতে, অ্যাপল এখন চীনের উপর থেকে তাদের নির্ভরতা কমাতে চাইছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সংক্রান্ত নীতি। এই কারণে, অ্যাপল এখন তাদের উৎপাদনের একটি বড় অংশ ভারত থেকে সরবরাহ করার পরিকল্পনা নিয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য।
খুব শীঘ্রই বাজারে আসছে আইফোন ১৭। অ্যাপল এই সিরিজের চারটি মডেলই ভারত থেকে উৎপাদন শুরু করেছে। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, কারণ এই প্রথমবার নতুন মডেল উন্মোচনের সময় থেকেই ভারত থেকে আইফোনের সব মডেল সরবরাহ করা হবে। এটি ভারতের প্রযুক্তি খাতে অ্যাপলের আস্থার এক বড় প্রতিফলন।
বর্তমানে, অ্যাপল ভারতে পাঁচটি কারখানায় আইফোন উৎপাদন করছে, যার মধ্যে দুটি নতুন কারখানা। এই কারখানাগুলো থেকে উৎপাদনের পরিমাণ দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এক বছরে ভারতে প্রায় ২,২০০ কোটি ডলারের আইফোন তৈরি হয়েছে। বর্তমানে, বিশ্বে মোট আইফোন উৎপাদনের ২০ শতাংশই হচ্ছে ভারতে।
টাটা গ্রুপের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অ্যাপলের উৎপাদন কৌশলকে আরও শক্তিশালী করবে। ভারতের উৎপাদন সক্ষমতা এবং দক্ষ শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপল তাদের সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও স্থিতিশীল করতে চাইছে। এই অংশীদারিত্বের ফলে ভারত শুধু আইফোন উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবেই নয়, বরং বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে। এটি দেশের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখবে।
এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে টাটা গ্রুপ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানির সাথে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এটি তাদের উৎপাদন দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তুলবে। অন্যদিকে, অ্যাপল তাদের উৎপাদনের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি একটি নতুন এবং বিশাল বাজারের সুবিধা নিতে পারবে। সব মিলিয়ে, এই পদক্ষেপটি ভারত এবং অ্যাপল—উভয় পক্ষের জন্যই একটি জয়-জয় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে ভারত যে বৈশ্বিক প্রযুক্তি মানচিত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করতে চলেছে, এই ঘটনাটি তারই এক স্পষ্ট ইঙ্গিত।