মুখস্থ নয়, সংবিধান বুঝে পড়লেই মিলবে সাফল্য: পরামর্শ ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অর্জনকারীর
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হতে হলে সংবিধান বিষয়ে কেবল মুখস্থ নির্ভরতা যথেষ্ট নয়। অনেকেই এমন ভুল করেন, যার ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন সম্ভব হয় না। সংবিধানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভালো করতে হলে এর মূল কাঠামো, বিষয়বস্তু এবং প্রয়োগের পদ্ধতি ভালোভাবে বুঝতে হয়। সম্প্রতি ১৭তম বিজেএস পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অর্জনকারী শেখ সাদলী আল জাদিদ, সংবিধান বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, যা কেবল আইন শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বিসিএস, নন-ক্যাডার, ব্যাংক, প্রাইমারি শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সবার জন্যই সহায়ক হবে।
কেন জরুরি এই প্রস্তুতি?
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সংবিধান থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে। বিশেষ করে সহকারী জজ পরীক্ষায় এই অংশে সর্বোচ্চ ৮০ নম্বর বরাদ্দ থাকে, যা চূড়ান্ত ফলাফলে বড় ভূমিকা রাখে। তাই এই বিষয়ে সঠিক ও পরিকল্পিত প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র অনুচ্ছেদ মুখস্থ করে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝে বিশ্লেষণ করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
প্রস্তুতির শুরুর ধাপ: মুখস্থ নয়, বোঝার চেষ্টা
শেখ সাদলী আল জাদিদ প্রথমেই সংবিধান বুঝে পড়ার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমেই পুরো সংবিধান মুখস্থ করতে যাওয়ার দরকার নেই।’ বরং একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে শুরু করা উচিত। প্রথম ২০ নম্বরের নির্ধারিত অংশ যেমন General Clauses Act ভালোভাবে পড়ে ফেলা যেতে পারে। এরপর সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলো, যেমন—অনুচ্ছেদ ৮-২৫ (রাষ্ট্রের মূলনীতি), ২৬-৪৭ ক (মৌলিক অধিকার), ৯৪-১১৭ (বিচার বিভাগ) এবং ১১৮-১২৬ (নির্বাচন বিভাগ) এর ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে রিট (Writ) অংশটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত পরীক্ষার জন্য এসব অনুচ্ছেদ মুখস্থ থাকার পাশাপাশি এর ব্যাখ্যা জানা জরুরি।
প্রয়োগের কৌশল ও মানসম্মত বই
সংবিধানের প্রস্তাবনা (Preamble) মুখস্থ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এটি সংবিধানের সারমর্ম, যা লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা বোর্ডে বারবার ব্যবহার করতে হয়। প্রস্তুতির জন্য ভালো বইয়ের বিকল্প নেই। বাংলায় মো’তাছিম বিল্লাহ এবং ইংরেজিতে জসিম আলী চৌধুরীর বই দুটি খুবই সহায়ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একরাম হোসেন স্যারের সংবিধানভিত্তিক জার্নাল ও ইউটিউব লেকচার থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, Marbury v. Madison মামলার একটি উক্তি, ‘It is emphatically the province and duty of the Judicial Department to say what the law is,’ বিচার বিভাগের ক্ষমতা বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডকট্রিন, সংশোধনী ও মামলার রায়
সংবিধানের প্রস্তুতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকট্রিন বা মূলনীতি জানা আবশ্যক। যেমন, Basic Structure Doctrine, Doctrine of Severability এবং Public Trust Doctrine। তুরাগ নদী মামলায় Public Trust Doctrine বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা পরিবেশ-সম্পর্কিত আলোচনায় ব্যবহৃত হতে পারে। এ ছাড়া সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীগুলো (৫ম, ৭ম, ১৬তম) নিয়ে নিজের ভাষায় ২-৩ পৃষ্ঠার নোট তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি। Shishir Monir-এর ওয়েবসাইটে এসব মামলার সারমর্ম পাওয়া যায়, যা নোট তৈরির ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপট ও প্রস্তুতির বিশেষ কৌশল
অনেক সময় প্রশ্ন সমসাময়িক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে। তাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা সংবিধান সংশোধনী প্রক্রিয়া-এর মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা জরুরি। এ জন্য গুগল, ইউটিউব, জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় ও মতামত কলাম এবং গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ পড়া যেতে পারে।
নিয়মিত প্রস্তুতির জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শও দিয়েছেন শেখ সাদলী। যেমন— বোঝে পড়া, ছোট ছোট নোট তৈরি করা, গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ চিহ্নিত করা এবং ধারাবাহিক রিভিশন। সপ্তাহে অন্তত এক দিন রিভিশনের জন্য রাখা উচিত।
সহজে মনে রাখার জন্য তিনটি উপায়ও তিনি বাতলে দিয়েছেন:
- Mnemonic: শর্টকাট টেকনিক ব্যবহার করে অনুচ্ছেদ বা ধারা মনে রাখা।
- গল্পের মতো শেখা: জটিল বিষয়কে গল্প আকারে কল্পনা করলে তা সহজে মনে থাকে।
- অন্যকে পড়ানো: বন্ধু বা সহপাঠীকে কোনো বিষয় শেখালে তা নিজেরও ভালোভাবে রিভিশন হয়ে যায়।
পরিকল্পিত এবং কৌশলগত প্রস্তুতি নিলে সংবিধানের মতো একটি জটিল বিষয়ও সহজে আয়ত্ত করা সম্ভব, যা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।