সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির নতুন দিগন্ত: ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’-এর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত
বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫ – সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গঠিত ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’ আজ তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক সভা সম্পন্ন করেছে। সকাল ১১টায় সচিবালয়ের পুরাতন ১ নম্বর ভবনের সাবেক মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দেশের প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সভাপতি ও সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান। সরকার গত ২৭ জুলাই ২৩ সদস্যের এই কমিশন গঠন করে, যার মূল লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো সমন্বয় করা। এর আগে ২০১৫ সালে শেষবারের মতো সরকারি কর্মচারীদের জন্য পে স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল, যেখানে ২০টি গ্রেডে বেতন-ভাতা নির্ধারিত হয়। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কোনো বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়নি। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন বেতন স্কেল প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
এই কমিশনের মূল দায়িত্ব হলো দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে একটি বিস্তারিত সুপারিশমালা সরকারের কাছে জমা দেওয়া। এই সুপারিশের ভিত্তিতেই পরবর্তী বেতন কাঠামো নির্ধারিত হবে। কমিশনের কার্যপরিধির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হলো, একজন কর্মচারীর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন ধরে আর্থিক ব্যয়ের হিসাব তৈরি করা। এর মাধ্যমে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা যায়, এই কমিশন শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের জন্যই নয়, বরং আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বেতন-ভাতা পর্যালোচনা করবে। তবে উল্লেখ্য যে, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বিষয়টি এই কমিশনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
কমিশনের সদস্যরা সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাতে তিনি কমিশনের সদস্যদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তাগিদ দেন। একই সঙ্গে তিনি দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং মূল্যস্ফীতির হারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার পরামর্শ দেন।
কমিশনের প্রথম সভা থেকে শুরু করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর সরকার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে একটি নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি বড় স্বস্তির কারণ হবে বলে আশা করা যায়।
এই নতুন বেতন কমিশনের কাজ সফল হলে দেশের সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং অর্থনৈতিক চাপ অনেকটা কমবে। এটি দেশের অর্থনীতিতেও একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।