বলিউডে ফিরল রোমান্টিক সিনেমার দিন: কেন হিট করল ‘সাইয়ারা’?
বলিউডে রোমান্টিক ঘরানার সিনেমার এক নতুন সূর্যোদয় ঘটেছে। যখন বড় তারকাদের ছবিও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ছে, আর সহিংস অ্যাকশন সিনেমাও দর্শক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন সম্পূর্ণ নতুন দুই মুখ নিয়ে আসা ‘সাইয়ারা’ নামের একটি সিনেমা সবার ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। মাত্র ৪৫ কোটি রুপি বাজেটের এই সিনেমাটি এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে ৫৮০ কোটি রুপি আয় করে ফেলেছে। সিনেমার এই অভাবনীয় সাফল্য নিয়ে কেবল সাধারণ দর্শক বা সমালোচকই নয়, কথা বলছেন বলিউড তারকারাও।
তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন
‘সাইয়ারা’ সিনেমার সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ এর গল্প বলার ধরন, যা তরুণ প্রজন্মকে সরাসরি স্পর্শ করেছে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আমির খান বলেন, ‘প্রতিটি প্রজন্মের আলাদা পছন্দ থাকে। ‘সাইয়ারা’র আবেগঘন গল্প ও তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সম্পর্কিত থিমই জেন-জেড (Gen Z) দর্শকদের মন জয় করেছে।’ তাঁর মতে, একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে সব ধরনের দর্শকের মনে দাগ কাটার মতো গল্প খুঁজে বের করা উচিত। আমির খানের প্রযোজনা সংস্থা এই সিনেমার দুই নবাগত অভিনেতা আহান পান্ডে ও অনীত পাড্ডার অভিনয় এবং পর্দার রসায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
রোমান্টিক সিনেমার প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত
বলিউডের প্রভাবশালী পরিচালক ও প্রযোজক করণ জোহর ‘সাইয়ারা’র প্রশংসা করে বলেছেন, এই সিনেমাটি বলিউডে আবার রোমান্টিক সিনেমার দিন ফিরিয়ে আনবে। সিনেমাটি দেখে তাঁর সৃজনশীল সত্তা নতুন করে জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর এমন কিছু দেখলাম, যা আমাকে সত্যি সত্যি অনুপ্রাণিত করেছে। আমার মনে হচ্ছে, আমাকেও একটা রোমান্টিক সিনেমা বানাতে হবে।’ একই সময়ে তিনি প্রথম সারির তারকাদের সমালোচনা করে বলেন, অনেক বড় তারকা আজকাল ঝুঁকি নিতে চান না, কারণ বক্স অফিসের সাফল্য তাঁদের কাছে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নতুন মুখের জাদু ও গল্পের সরলতা
দর্শকরা দীর্ঘদিন ধরেই বলিউডে নতুন মুখের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ‘সাইয়ারা’র প্রধান চরিত্রে আহান পান্ডে ও অনীত পাড্ডার দুর্দান্ত পর্দার রসায়ন দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। এটি এমন এক ঘটনা, যা অনেক দিন পর বলিউডে ঘটল। সিনেমার গল্পটি সহজ-সরল এবং সম্পর্কনির্ভর, যা দর্শককে আকৃষ্ট করেছে। সহিংস অ্যাকশন বা ফ্র্যাঞ্চাইজি সিনেমার ভিড়ে রোমান্টিক গল্পের এই অভাব পূরণ করেছে ‘সাইয়ারা’। অনেক দর্শকই এই সিনেমাকে ‘আশিকি ২’, ‘হাম তুম’, ‘মোহব্বতে’, এমনকি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’-এর মতো কালজয়ী রোমান্টিক সিনেমার সঙ্গে তুলনা করছেন।
সুরের জাদুতে প্রচার
‘সাইয়ারা’র প্রচারের ধরন ছিল একেবারেই ভিন্ন। কোনো অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে রিয়েলিটি শো বা পডকাস্টে দেখা যায়নি। পরিচালক মোহিত সুরি, গীতিকার ইরশাদ কামিল এবং সংগীত পরিচালকই শুধু গল্প, গান আর নতুন মুখের কথা বলেছেন। সিনেমার গানগুলোই ছিল এর মূল প্রচারক। জুনে মুক্তি পাওয়া সিনেমার টাইটেল ট্র্যাক ব্যাপক সাড়া ফেলে, এবং এরপর একে একে অন্য গানগুলোও হিট হয়। ফাহিম আবদুল্লাহ, জুবিন নাটিয়াল, অরিজিৎ সিং ও শ্রেয়া ঘোষালের গানগুলো দীর্ঘদিন পর হিন্দি সিনেমার দর্শকের মনে মেলোডি প্রেমের সুর ফিরিয়ে এনেছে।
‘সাইয়ারা’র গল্প
সিনেমাটির গল্প বানী ও কৃষকে নিয়ে। বানী, যে তার বিয়ে ভাঙার পর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তার দেখা হয় এক রাগী ও বদমেজাজি গায়ক কৃষ কাপুরের সঙ্গে। কৃষ স্বপ্ন দেখে বড় গায়ক হওয়ার, কিন্তু স্বজনপ্রীতির কারণে সে সুযোগ পায় না। ফলে তার মধ্যে ক্ষোভ জমে থাকে। ভাগ্যের ফেরে তারা দু’জন আবার এক হয়, তবে তা নিছকই স্বার্থের কারণে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। যখন তারা একে অপরের কাছে আসে, তখনই এক কঠিন সত্য তাদের বিচ্ছেদ ঘটানোর চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে কী ঘটে, তা জানতে হলে ছবিটি দেখতে হবে।
সামগ্রিকভাবে, ‘সাইয়ারা’ প্রমাণ করেছে যে, একটি খাঁটি গল্প, নতুন মুখ এবং মন ছুঁয়ে যাওয়া গান দিয়েও বক্স অফিসে ঝড় তোলা সম্ভব।