বিপদ পেরিয়ে ঘরে ফেরা: লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ১৭৫ বাংলাদেশি

 

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে মুক্ত বাতাস আর স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে দেখলেন ১৭৫ জন বাংলাদেশি। লিবিয়ার বেনগাজীর গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে আটক থাকার পর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহায়তায় তারা দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে বুরাক এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি ছিল তাদের জন্য এক নতুন জীবনের শুরু।

এই বাংলাদেশিরা অবৈধ পথে লিবিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন এবং সেখানে নানা ধরনের প্রতিকূলতার শিকার হন। অনেকে মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, আবার কেউ কেউ দীর্ঘ সময় ধরে ডিটেনশন সেন্টারে মানবেতর জীবন কাটিয়েছেন। তাদের এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি এবং আইওএমের যৌথ প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে।

প্রত্যাবাসনের এই মানবিক উদ্যোগে দূতাবাস সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশারের নেতৃত্বে দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন এবং দেশে ফেরার আগে প্রবাসীদের বিদায় জানান। এ সময় তিনি লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ ও আইওএমকে তাদের সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে ভবিষ্যতেও এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

রাষ্ট্রদূত আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার দেশে ফেরা অভিবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই এবং বৈধ ও নিরাপদ উপায়ে বিদেশ ভ্রমণ করা উচিত। তিনি আরও বলেন, অবৈধ পথে বিদেশে গিয়ে যে কতটা বিপদ ও ঝুঁকি থাকে, তা এই প্রবাসীরা নিজেদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি করেছেন। তিনি দেশে ফিরে সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার এবং মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। দূতাবাস এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

এই প্রত্যাবাসন শুধু ১৭৫ জন মানুষের ঘরে ফেরা নয়, বরং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে একটি জোরালো বার্তা। বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপোলি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অবৈধ পথে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়া অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় দেশে ফেরাতে এই উদ্যোগ একটি মানবিক উদাহরণ। এটি প্রমাণ করে যে, সরকার তার নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে কতটা বদ্ধপরিকর।

ঘরে ফেরা এই মানুষগুলো এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। অনেকে হয়তো আবার নতুন করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, তবে এবার নিশ্চয়ই বৈধ ও নিরাপদ উপায়ে। তাদের এই অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য তরুণদের জন্য একটি শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে। এটি মনে করিয়ে দেবে যে, শর্টকাট পথে সাফল্য আসে না, বরং এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি মানব পাচার রোধ এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।