ব্যাংক ও বিমা খাতের দাপটে সূচকের বড় উত্থান, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন দেখলো পুঁজিবাজার

 

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক ভিন্ন চিত্র দেখা গেলো। ব্যাংক ও বিমা খাতের দাপটে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশা জাগিয়েছে। সোমবার দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪৫৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যদিও টাকার অঙ্কে লেনদেন কিছুটা কমেছে, কিন্তু এটি চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হিসেবে রেকর্ড করেছে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক ও বিমা খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। এই খাতগুলোর শেয়ারের দাম বাড়ায় সামগ্রিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সোমবার ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মোট ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩৮টির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৪টির, আর ৪৪টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। এর মধ্যে ব্যাংক খাতের ৩০টি শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং মাত্র একটির দাম কমেছে। একই চিত্র দেখা গেছে বিমা খাতেও; ৫৫টি বিমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে মাত্র ৩টির দাম কমেছে। এই চিত্রই বলে দেয়, বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ এখন কোন দিকে।

লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমলেও বাজারের গতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৭৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের ১ হাজার ২০০ কোটি ২৬ লাখ টাকার তুলনায় ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা কম। লেনদেন কমলেও এটি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন, যা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং তারল্যের ইঙ্গিত দেয়।

এদিনের লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে কয়েকটি কোম্পানি। সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার, যার পরিমাণ ৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস (৩২ কোটি ৪ লাখ টাকা) এবং তৃতীয় স্থানে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা)। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে মালেক স্পিনিং, সোনালি পেপার, বিচ হ্যাচারি, ওরিয়ন ইনফিউশন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এই কোম্পানিগুলোর লেনদেন থেকে বোঝা যায়, নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে বেশি।

শুধু ডিএসই নয়, অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭০ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৫টির দাম বেড়েছে, বিপরীতে দাম কমেছে ৬০টির এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের ২০ কোটি ৪০ লাখ টাকার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এটিও বাজারে গতিশীলতার একটি ইতিবাচক লক্ষণ।

সার্বিকভাবে, সোমবারের পুঁজিবাজারের চিত্র বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। ব্যাংক ও বিমা খাতের শক্তিশালী পারফরম্যান্স সূচককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যদিও লেনদেন কিছুটা কমেছে, কিন্তু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড বাজারের প্রতি আস্থা ধরে রেখেছে। আশা করা যায়, এই ধারা বজায় থাকলে আগামী দিনগুলোতে বাজার আরও স্থিতিশীল এবং ইতিবাচক থাকবে।