প্রতিনিধি ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ২:১৬ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ৪ মিলিয়ন ইউরোর বেশি একটি সহায়তা প্যাকেজ দেবে। সম্প্রতি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, এই সহায়তা প্যাকেজটি বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে সাহায্য করবে।
গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ছয় সদস্যের ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এসব কথা বলেন। মাইকেল মিলার বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ২০২৬ সালের শুরুর একটি সময়সীমার দিকে এগোচ্ছি।”
নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ ও মাসগুলোতে নির্বাচনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি। তিনি বলেন, “এই কারণেই আমরা এখন আমাদের দক্ষতা কাজে লাগাচ্ছি। আমরা চাই আপনাদের নির্বাচনগুলো অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হোক, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হোক এবং অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হোক।”
মাইকেল মিলার জানান, তিনি শুধু ইইউ প্রতিনিধি দলের সহকর্মীদের নিয়ে আসেননি, বরং ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিদেরও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। এই প্রতিনিধিরা বাস্তবায়নকারী অংশীদার এবং নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ, যারা আসন্ন নির্বাচনে নাগরিক পর্যবেক্ষণে বিশেষভাবে নজর রাখবেন। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইইউ নিশ্চিত করতে চায় যে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, এই সহায়তা প্যাকেজটি সরাসরি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এর মধ্যে অপারেশনাল পরিকল্পনা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মিলার বলেন, “বাংলাদেশে আমাদের কাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমাদের লক্ষ্য থাকবে এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, দক্ষতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।”
ইইউ রাষ্ট্রদূত আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে একটি নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন (EOM) পাঠানোর সম্ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি বলেন, “এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা আগামী মাসগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।”
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে মাইকেল মিলার বলেন, আগামী মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসবে। এই দল বিবেচনা করবে যে এখানে একটি নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর মতো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে কিনা। তিনি বলেন, “সুতরাং, আমরা সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা বিবেচনা করছি। তবে আমি আপনাদের যা বলতে পারি তা হলো, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে একটি অগ্রাধিকার, বিশেষ করে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন মোতায়েনের ক্ষেত্রে।”
নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি মনে করেন বেশ কিছু বিষয় সমাধান করা প্রয়োজন, কারণ বাংলাদেশ এখন একটি গভীর রাজনৈতিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের অভিজ্ঞতা রাখে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে সেই নির্বাচনগুলো পরিচালনা ও ফলাফলের দিক থেকে অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।”