আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের সঙ্গে কি নিরাপত্তা চুক্তি করছে সিরিয়া?

  প্রতিনিধি ২৬ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:৪৩ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

ইসরায়েলের সঙ্গে কি নিরাপত্তা চুক্তি করছে সিরিয়া?

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা ইসরায়েলের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত রোববার আরব গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। স্থানীয় গণমাধ্যম সিরিয়া টিভি আল-শারার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, দামেস্ক ও তেল আবিবের মধ্যে একটি সম্ভাব্য নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে, যা ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি রেখার ওপর ভিত্তি করে হতে পারে।

আল-শারা স্পষ্ট করে বলেছেন, সিরিয়া এবং এই অঞ্চলের বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করে এমন কোনো চুক্তি বা সিদ্ধান্ত নিতে তিনি দ্বিধা করবেন না। এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি ১৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) প্যারিসে ইসরায়েলের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানো, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল ‘দক্ষিণ সিরিয়ার সুওয়াইদা প্রদেশে যুদ্ধবিরতি’ এবং ‘১৯৭৪ সালের চুক্তি পুনর্বহাল’ করা।

সানা আরও জানিয়েছে, এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করছে। এই কূটনৈতিক উদ্যোগকে ‘সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদার করা এবং এর ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার’ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি ছিল ১৯৭৩ সালের অক্টোবর যুদ্ধের পর সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই চুক্তিটি যুদ্ধরত বাহিনীগুলোকে আলাদা করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যাতে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো যায়। চুক্তি অনুযায়ী, দুই পক্ষের সামরিক অবস্থান আলাদা করার জন্য ‘আলফা’ এবং ‘ব্রাভো’ নামে দুটি প্রধান রেখা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই রেখা দুটির মাঝখানে একটি বাফার জোন তৈরি করা হয়, যা জাতিসংঘের ডিসএনগেজমেন্ট অবজারভার ফোর্স (ইউএনডিওএফ) দ্বারা তত্ত্বাবধান করা হয়।

এই সম্ভাব্য চুক্তিটি যদি সফল হয়, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বছরের পর বছর ধরে চলা বৈরী সম্পর্ক এবং সামরিক উত্তেজনার পর সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে তা এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

তবে এই আলোচনাগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং উভয় দেশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর রয়েছে, কারণ যেকোনো চুক্তির ফলে আঞ্চলিক ক্ষমতা কাঠামো এবং অন্যান্য দেশের (যেমন ইরান) সঙ্গে সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সিরিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষার তাগিদই প্রেসিডেন্ট আল-শারার এই পদক্ষেপের অন্যতম কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের দিক থেকে এই আলোচনা ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে।

এই চুক্তির আলোচনা এগিয়ে চললে, তা শুধু সিরিয়া এবং ইসরায়েলের জন্যই নয়, বরং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। তবে, চূড়ান্ত ফলাফল কী হবে, তা জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।