প্রতিনিধি ১৩ অগাস্ট ২০২৫ , ১১:২৪ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
গাজা, ১৫ মে, ২০২৪: গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলা এক নতুন ও ভয়ংকর মাত্রা নিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ইইউ, কানাডাসহ ২৬টি দেশের নিন্দা জানানো সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে ১৯ জনকে খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের সময় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যা গাজার মানুষের করুণ অবস্থা তুলে ধরে।
এই বর্বরতার শিকার হয়েছেন নিরপরাধ মানুষ, যারা শুধু নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে খাদ্য সহায়তার খোঁজে বেরিয়েছিলেন। মোহাম্মদ আবু নাহল নামের এক ফিলিস্তিনি নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছেন, “গুলি চলার মধ্যে আমি পেটের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়েছি। আমাদের নিচে অনেক লাশ পড়ে ছিল, আমরা তাদের টেনে বের করছিলাম। আমি শুধু আমার সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য এসেছি। খাবার আর পানি থাকলে আসতাম না। কী করব? চুরি করব? লুট করব?” তার এই প্রশ্ন গাজার লাখো মানুষের হৃদয়ের প্রতিধ্বনি।
ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য ও পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, অপুষ্টিতে ভুগে মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স জানিয়েছে, ৬ বছরের শিশু জামাল ফাদি আল-নাজ্জার এবং ৩০ বছরের উইসাম আবু মোহসেন অপুষ্টিতে মারা গেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শতাধিক শিশুসহ ২২৭ জন ক্ষুধাজনিত কারণে মারা গেছেন, যা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ২৬টি দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার মানবিক দুর্ভোগ ‘অকল্পনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে’ এবং দুর্ভিক্ষ তাদের চোখের সামনেই unfolding হচ্ছে। তারা ইসরায়েলের এই পরিস্থিতিকে ‘মারণাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আগ্রাসন এবং অবরোধের দ্বিমুখী আঘাত
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল ৪৩০টিরও বেশি খাদ্যপণ্য গাজায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, যার মধ্যে রয়েছে সব ধরনের হিমায়িত মাংস, মাছ, চিজ, দুগ্ধজাত পণ্য, শাকসবজি এবং ফল। শুধু তাই নয়, ৪৪টি খাদ্য ব্যাংক এবং ৫৭টি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র বোমায় উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাজায় চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুতের সুযোগ দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, বিশেষ করে যখন গাজা সিটি দখলের প্রস্তুতি চলছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গত তিন দিন ধরে গাজা সিটিতে সব ধরণের অস্ত্র দিয়ে হামলা চলছে, যার কারণে উদ্ধার অভিযানেও বিঘ্ন ঘটছে এবং ১৩৭ জন সিভিল ডিফেন্স সদস্য নিহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে গাজার ‘গণহত্যা’ অব্যাহত রাখার জন্য দায়ী করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৬১,৫৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৫৪,০৮৮ জন আহত হয়েছে।
এই পরিসংখ্যানগুলো শুধুমাত্র সংখ্যা নয়, বরং প্রতিটি সংখ্যা এক একটি পরিবারের স্বপ্ন, আশা এবং জীবনের সমাপ্তি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া গাজার এই ভয়াবহ চিত্র আরও ভয়ানক আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।