প্রতিনিধি ১৬ অগাস্ট ২০২৫ , ৩:২৮ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত সরাসরি জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য নির্মিত পাইপলাইনটি অবশেষে শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। এটি দেশের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে, যা শুধু সময়ই নয়, বিপুল পরিমাণ অর্থও সাশ্রয় করবে। এতদিন নৌপথে তেল পরিবহনে যে সময় লাগত, এখন তার চেয়ে অনেক কম সময়ে এবং কম খরচে তা করা সম্ভব হবে।
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত জ্বালানি তেল পরিবহনের একমাত্র ভরসা ছিল নৌপথ। এই পথে তেল পৌঁছাতে সময় লাগত ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু নতুন পাইপলাইনটি সেই সময়কে কমিয়ে এনেছে মাত্র ১২ ঘণ্টায়। এই বিশাল সময় সাশ্রয় দেশের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও দ্রুত ও কার্যকর করে তুলবে।
এই পাইপলাইন স্থাপনের ফলে প্রতি বছর প্রায় ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আগে নৌপথে তেল পরিবহনে মাসে ১১০টিরও বেশি ট্যাংকার ব্যবহার করতে হতো, যার জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বছরে প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা খরচ করত। এখন পাইপলাইন চালু হওয়ায় সেই খরচ কমে আসবে ৯০ কোটি টাকায়। এর পাশাপাশি, সিস্টেম লস এবং চুরি রোধের মাধ্যমেও খরচ আরও কমবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ২০১৮ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট ছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। যদিও করোনা মহামারির কারণে কাজ শেষ হতে বিলম্ব হয় এবং খরচ বেড়ে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, প্রকল্পটি অবশেষে চলতি বছরের মার্চে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
পাইপলাইনটি চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ২৪১.২৮ কিলোমিটার এবং গোদনাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত আরও ৮.২৯ কিলোমিটার বিস্তৃত। মোট ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নেটওয়ার্কটি ভূগর্ভস্থভাবে স্থাপন করা হয়েছে এবং এর পথে ২২টি নদী ও খাল অতিক্রম করা হয়েছে। এই বিশাল অবকাঠামোর অংশ হিসেবে মোট ৯টি স্টেশন এবং ২৮৬.৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
পাইপলাইনটির বার্ষিক পরিবহন ক্ষমতা ২.৭ থেকে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যা ভবিষ্যতে ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত করা সম্ভব। বর্তমানে এটি প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ মেট্রিক টন তেল পরিবহন করতে পারে।
পাইপলাইনের নিরাপত্তা ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় একটি আধুনিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে ঢাকায় জ্বালানি সরবরাহের প্রতিটি ধাপ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এতে করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ও ত্রুটিমুক্ত থাকবে।
এই প্রকল্পের সফল প্রাক-কমিশনিংয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনী কার্যক্রমে অংশ নেন বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ হাসান-উজ-জামান।
এই পাইপলাইনটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি শুধু সময় ও অর্থই সাশ্রয় করবে না, বরং জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাত এখন এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।