জাতীয়

জীবনের সন্ধানে লিবিয়া: ১৭৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন

  প্রতিনিধি ২১ অগাস্ট ২০২৫ , ১০:৪৪ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

জীবনের সন্ধানে লিবিয়া: ১৭৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন

লিবিয়ার বেনগাজীর এক ডিটেনশন সেন্টার থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশে ফিরলেন ১৭৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক। অবৈধ পথে বিদেশ গিয়ে আটকে পড়া এই মানুষগুলো অবশেষে মুক্তি পেলেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহায়তায় লিবিয়ার বুরাক এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

জানা গেছে, লিবিয়ার বেনগাজীর গানফুদা ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন এই ১৭৫ জন বাংলাদেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় তারা বেছে নিয়েছিলেন মানব পাচারকারীদের দেখানো বিপজ্জনক পথ। কিন্তু বিদেশের মাটিতে পা রেখেই তাদের স্বপ্ন ভেঙে যায়। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ধরা পড়ে তাদের ঠাঁই হয় লিবিয়ার কারাগারে। দীর্ঘ দিন সেখানে আটকা থাকার পর অবশেষে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আইওএম-এর যৌথ প্রচেষ্টায় তারা দেশে ফেরার সুযোগ পান।

লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল ডিটেনশন সেন্টারে উপস্থিত থেকে প্রত্যাবাসিতদের বিদায় জানান। এসময় রাষ্ট্রদূত লিবিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইওএমকে তাদের সহায়তার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান এবং ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

দেশে ফেরা অভিবাসীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রদূত বলেন, “ভবিষ্যতে বিদেশ যেতে হলে অবশ্যই বৈধ ও নিরাপদ পথে যেতে হবে।” তিনি আরও বলেন, এর জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। তিনি প্রত্যেককে নিজ নিজ এলাকায় অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। একই সাথে, তিনি মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীদের পরামর্শ দেন এবং দূতাবাস এক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দেন।

এই প্রত্যাবাসনের ঘটনা আবারও অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি এবং মানব পাচারকারী চক্রের ভয়াবহতা তুলে ধরে। দেশের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশায় এসব চক্রের ফাঁদে পা দেয়। অথচ বৈধ পথে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে বিদেশ গেলে এমন বিপদ থেকে বাঁচা সম্ভব। রাষ্ট্রদূত আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশারের এই আহ্বান একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। দেশে ফিরে আসা এই ১৭৫ জন বাংলাদেশি যেন নতুন করে নিজেদের জীবন সাজানোর সুযোগ পান, সেই সাথে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে তাদের অভিজ্ঞতা যেন কাজে লাগে।

ত্রিপোলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও আইওএম-এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশা করা যায়।

এই প্রত্যাবাসন শুধুমাত্র কিছু মানুষকে দেশে ফিরিয়ে আনার ঘটনা নয়, এটি মানব পাচারের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত লড়াইয়ের অংশ। এটি একটি বার্তাও দেয় যে, বৈধ পথে না গেলে বিদেশযাত্রা কতটা বিপদজনক হতে পারে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন নিজেদের সচেতনতা এবং অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিক ধারণা।