প্রতিনিধি ১৯ অগাস্ট ২০২৫ , ৭:১৩ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
সংবাদ সম্মেলন শেষে হোটেল লবিতে সাংবাদিকদের ভিড় দেখে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম ব্রিটিশ দুর্নীতি দমন বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স মার্শালকে বললেন, ‘দেখেছেন, আমাদের দেশে ক্রিকেটের কী জনপ্রিয়তা!’ জবাবে মার্শালও রসিকতা করে বললেন, ‘তুমিও তো দেখছি এখানে বেশ জনপ্রিয়!’
বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে এই জনপ্রিয় খেলাটিতে দুর্নীতি আর ফিক্সিংয়ের কালো ছায়া বিস্তার করছে। ক্রিকেটের এই বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে এবার মাঠে নেমেছেন আইসিসির সাবেক দুর্নীতি দমন বিভাগের প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল। এক বছরের চুক্তিতে বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিটের পরামর্শক হিসেবে তিনি এখন ঢাকায়।
ঢাকায় আসার পরই কাজে নেমে পড়েছেন মার্শাল। প্রথমে তিনি বিসিবির মানবসম্পদ পুনর্গঠনের জন্য নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন এবং সেখানে নিজের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। তাঁর দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী বিসিবির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে ঢেলে সাজানো হবে।
মার্শাল বলেন, ‘আমরা একটি নৈতিকতা বিভাগ তৈরি করব, যারা সবাইকে দুর্নীতি বিষয়ে সচেতন করবে। তারা যেন বুঝতে পারে এসবের কী বিপদ আছে। আমরা নিশ্চিত করব দুর্নীতিবাজেরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়। তাদের বাংলাদেশে চাই না, দেশ থেকে বের করে দেব। নৈতিকতা বিভাগ এই বার্তা দিতে চায় যে বাংলাদেশে ক্রিকেট স্বচ্ছ থাকবে।’
গত বছর আইসিসি থেকে বিদায় নেওয়ার সময় মার্শাল বলেছিলেন, দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোকে দুর্নীতিবাজরা টার্গেট করে। কাকতালীয়ভাবে, মার্শাল যেদিন ঢাকায় এসেছেন, সেদিনই বিপিএল-এ দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়।
বিপিএল-কে দুর্বল লিগ মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নে মার্শাল বলেন, ‘যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই বড় হুমকি হচ্ছে যখন তাতে দুর্বলতা দেখা যায়। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ পেশাদারভাবে না চললে ও যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে দুর্নীতিবাজরা সেটিকে লক্ষ্য বানাবেই। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে বিপিএল-এর যেন এমন ভাবমূর্তি না থাকে। যেভাবে টুর্নামেন্ট চলে, ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া হয়—নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সবকিছুই চূড়ান্ত পেশাদারত্বের সঙ্গে সামলাতে হবে।’
মার্শালের কথায় বারবারই একটি বিষয় ফুটে উঠেছে—ক্রিকেটকে সুরক্ষিত রাখা। এটাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য দেশের ক্রিকেটার, কোচ, কর্মকর্তা সবাইকে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘তারা যেন বাংলাদেশের আইন, ইসলামিক আইন, মূল্যবোধ সম্পর্কে জানে। সব মিলিয়ে চেষ্টা করব খেলাটাকে কীভাবে আরও সুন্দরভাবে সুরক্ষিত রাখা যায়।’
আইসিসিতে কাজ করার সময় ডোপিংবিরোধী কার্যক্রমেও যুক্ত ছিলেন মার্শাল। বাংলাদেশেও তাঁর কাজের পরিধির মধ্যে এটি থাকবে। মার্শাল আশা করছেন, তাঁর অভিজ্ঞতায় বিসিবি’র দুর্নীতি দমন ইউনিট আরও শক্তিশালী হবে এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত থাকবে।