জাতীয়

নিয়োগ পাওয়ার পরেও নিয়োগপত্র নেই: রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে জটিলতায় আটকে আশরাফুলের চাকরি

  প্রতিনিধি ২০ অগাস্ট ২০২৫ , ২:৪৩ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

নিয়োগ পাওয়ার পরেও নিয়োগপত্র নেই: রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে জটিলতায় আটকে আশরাফুলের চাকরি

প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার বাধা পেরিয়ে সব ধাপেই সফল হয়েছেন। এমনকি মেধা তালিকায় তার নাম ছিল সবার প্রথমে। এরপরও সরকারি চাকরিটি তার হাতে ধরা দিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম তুষার সাধারণ বীমা করপোরেশনের জুনিয়র অফিসার (গ্রেড-১০) পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েও নিয়োগপত্র পাননি। তার অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

৬৭ জনের মেধা তালিকার প্রথম নামটিই ছিল আশরাফুলের। গত ১৫ জানুয়ারি ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর ২২ জুলাই অন্যান্য নির্বাচিত প্রার্থীর কাছে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হলেও তার কাছে তা পৌঁছায়নি। ১২ আগস্ট অন্যরা যখন চাকরিতে যোগদান করেন, তখনো তিনি বঞ্চিতই থেকে যান।

আশরাফুলের অভিযোগ, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ থাকার কারণে তাকে চাকরি দেওয়া হয়নি। সাধারণ বীমা করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনানুষ্ঠানিকভাবে তাকে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়। কেউ কেউ ধারণা দেন, তাকে নাকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তবে আশরাফুল এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত— তা প্রমাণ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী রেজিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বহুবার ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়েছি, পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলিতে আহত হয়েছি।”

তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ডাকসু আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। এমন একজন মানুষকে কীভাবে ‘আওয়ামী ট্যাগ’ দেওয়া সম্ভব, তা ভেবে তিনি হতবাক।

আশরাফুল জানান, এর আগেও তিনি তিনটি সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন, যদিও ব্যক্তিগত কারণে তিনি সেগুলোতে যোগ দেননি। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন নতুন করে এই ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে বলে তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

এই ঘটনার কারণে তিনি ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারেননি বলে জানান। বর্তমানে তার বাবা-মা অসুস্থ। পরিবারের দায়িত্ব এখন তার কাঁধে। টিউশনি ও ফ্রিল্যান্সিং করে তিনি পরিবারের খরচ চালাচ্ছেন। এই চাকরিটি তার জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।

এ বিষয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিরূপ মন্তব্য থাকলে সাধারণত তা আমলে নেওয়া হয়।” তবে সেই প্রতিবেদনে ঠিক কী লেখা আছে, তা তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানেন না।

আশরাফুল ইতোমধ্যে করপোরেশনের এমডি, জিএম ও ডিজিএমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। ৭ আগস্টের চিঠিতে তিনি পুলিশ ভেরিফিকেশন পুনরায় করার অনুরোধ জানান। এর আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানও নিয়োগপত্র প্রাপ্তিতে বিলম্বের বিষয়টি সদয় বিবেচনার জন্য করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, বোর্ড সভায় আলোচনার আগে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।

উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি অন্তর্বর্তী সরকার চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় যাচাইয়ের বিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আশরাফুলের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে বাস্তবে এখনো গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রভাব বহাল রয়েছে। আশরাফুল তার ফেসবুকে লিখেছেন, “ছাত্রলীগের হাতে মার খাওয়া আর পুলিশের টিয়ারশেল খাওয়ার হিসাব দিলে তা উপন্যাস হবে। তারপরও আমাকে আওয়ামী ট্যাগ দেওয়া বা নিয়োগপত্র না দেওয়া— এটা কীভাবে সম্ভব, তা আমার মাথায় আসে না।” এই অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।