প্রতিনিধি ২২ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:৩৯ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
অস্থায়ী সরকার কর্তৃক আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে ব্যস্ত। বিশেষ করে, দেশের ইসলামপন্থী দলগুলো একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যারা একটি একক প্ল্যাটফর্মের অধীনে সমস্ত ইসলামি দলকে একত্রিত করে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে, এই বৃহত্তর ঐক্যের পথে বেশ কিছু বড় বাধা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, অধিকাংশ ইসলামি দল জামায়াতের নেতৃত্বে জোটে যেতে নারাজ।
ঐক্যপ্রক্রিয়ায় বাধা: আদর্শ ও চিন্তাধারার পার্থক্য
অনেক ইসলামি দলের নেতারা সরাসরি জামায়াতের সঙ্গে জোটে না যাওয়ার কথা না বললেও, তারা জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শ ও চিন্তাধারার বড় পার্থক্যের কথা তুলে ধরছেন। এই মতপার্থক্য শুধু রাজনৈতিক কৌশলগত নয়, বরং তা মৌলিক আদর্শিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যেমন, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক যুগান্তরকে জানান, মাওলানা মওদুদি সাহেবের চিন্তাধারার সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যগতভাবে বড় পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, “এসব পার্থক্যের কারণে এখনো মূলধারার আলেমসমাজ জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করেননি।” একই কথা শোনা যাচ্ছে অন্যান্য দলের নেতাদের কাছ থেকেও। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফিন্দী বলেন, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির জায়গা থেকে জামায়াতের সঙ্গে জোটের কোনো সম্ভাবনা তিনি দেখেন না। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী জানান, মাঠপর্যায়ে জামায়াতের ব্যাপারে আলেমদের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট আলেমদের মতামতের বাইরে যাবে না। এসব কারণে জামায়াতের নেতৃত্বে একটি কার্যকর বৃহৎ জোট গঠন প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পৃথক জোটের সম্ভাবনা ও জামায়াতের আশাবাদ
জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী না হওয়ায় বেশ কয়েকটি ইসলামি দল নিজেদের মধ্যে পৃথক জোট গঠনের কথা ভাবছে। তারা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করছে এবং ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী এই প্রচেষ্টার কথা নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী এখনো আশাবাদী। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, তারা দেশের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় এবং আগামী নির্বাচনে একটি শক্তিশালী ঐক্যের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, “নির্বাচন যত কাছে আসবে, আমাদের এই প্রক্রিয়া তত দৃশ্যমান ও সুসংগঠিত হবে।”
চরমোনাই পীর এবং অন্যন্য দলের অবস্থান
চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, যা পূর্বে জামায়াতের প্রতি বৈরী ছিল, এখন তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এই দুই দলের মধ্যে নির্বাচনি জোট বা সমঝোতার আলোচনার কথা বাজারে শোনা গেলেও, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাদের মধ্যে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। তিনি বলেন, তাদের দল ইসলাম, দেশ ও মানবতার পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের (একাংশ) মহাসচিব ড. মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম স্পষ্ট করেই বলেছেন, তারা জামায়াতের সঙ্গে ভোটের সঙ্গী হবেন না।
ভবিষ্যৎ: একতাবদ্ধ না বিভাজিত?
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত ১০টি ইসলামি রাজনৈতিক দল রয়েছে। অতীতেও তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন করে ঐক্যের আলোচনা সামনে এলেও, জামায়াতের নেতৃত্ব নিয়ে মতপার্থক্য এই প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে। জামায়াত যেখানে একটি বৃহত্তর ঐক্য কামনা করছে, সেখানে অন্যান্য দল আদর্শিক ও চিন্তাগত পার্থক্যের কারণে তাদের থেকে দূরে থাকতে চাইছে। সব মিলিয়ে, এই জোট বা সমঝোতার বিষয়টি এখনো আলোচনার টেবিলে সীমাবদ্ধ এবং দিন যত গড়াচ্ছে, একটি বৃহৎ ইসলামি জোট গঠনের সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হচ্ছে।