খেলাধুলা

ফুটবল ট্রান্সফারের রোমাঞ্চকর ‘হাইজ্যাক’: টটেনহাম থেকে এজেকে ছিনিয়ে নিল আর্সেনাল!

  প্রতিনিধি ২২ অগাস্ট ২০২৫ , ৯:০১ এএম প্রিন্ট সংস্করণ

ফুটবল ট্রান্সফারের রোমাঞ্চকর ‘হাইজ্যাক’: টটেনহাম থেকে এজেকে ছিনিয়ে নিল আর্সেনাল!

ফুটবল বিশ্বের ট্রান্সফার উইন্ডো মানেই যেন নাটক আর রোমাঞ্চের এক উন্মাদ মঞ্চ। খেলোয়াড়দের দলবদলের গল্পে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে, যা সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। সম্প্রতি তেমনই একটি ঘটনা ঘটল ক্রিস্টাল প্যালেসের তারকা এবেরেচি এজের দলবদল নিয়ে। টটেনহাম যখন তাকে দলে ভেড়ানোর জন্য কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছিল, তখন শেষ মুহূর্তে দৃশ্যপটে আসে আর্সেনাল। রাতারাতি চিত্র পাল্টে গেল, এজে টটেনহামে না এসে নাম লেখালেন আর্সেনালে, যার জন্য ক্লাবটিকে গুণতে হলো ৯ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার। এটি ফুটবল ইতিহাসের প্রথম ‘হাইজ্যাক’ নয়, অতীতেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা স্মরণীয় হয়ে আছে। এখানে এমন চারটি বিখ্যাত ট্রান্সফার ‘হাইজ্যাক’ এর কথা তুলে ধরা হলো।

 

১. পল গাসকোয়াইন: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে টটেনহামে

 

১৯৮৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তৎকালীন কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার পল গাসকোয়াইনকে দলে নেওয়ার জন্য সবকিছু প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে মাল্টা যাওয়ার আগে ফার্গুসন গাসকোয়াইনের সঙ্গে কথা বলেন এবং গাসকোয়াইন তাকে নিশ্চিত করেন যে তিনি ইউনাইটেডেই যোগ দেবেন। কিন্তু ফার্গুসনের মাল্টা পৌঁছানোর পর পরই তার কাছে ইউনাইটেডের চেয়ারম্যান ফোন করে দুঃসংবাদটি দেন—গাসকোয়াইন টটেনহামে সই করেছেন।

গাসকোয়াইন তার আত্মজীবনীতে জানান, টটেনহাম তাকে ২২ লাখ পাউন্ডে সই করায়, যা তৎকালীন ব্রিটিশ রেকর্ড ছিল। এর মধ্যে ১ লাখ পাউন্ড সাইনিং ফি হিসেবে পান, যার ৭০ হাজার পাউন্ড দিয়ে তিনি বাবা-মায়ের জন্য একটি বাড়ি কিনে দেন। টটেনহামের এই ‘হাইজ্যাক’ এর পেছনে ছিল বড় অঙ্কের টাকার প্রস্তাব। গাসকোয়াইন চার বছর টটেনহামে কাটান এবং ১৯৯১ সালে এফএ কাপ জেতেন।

 

২. রয় কিন: ব্ল্যাকবার্ন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

 

নটিংহাম ফরেস্ট ছেড়ে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে মৌখিকভাবে একমত হয়েছিলেন রয় কিন। ব্ল্যাকবার্নের কোচ কেনি ডালগ্লিশের সঙ্গে তার ৪০ লাখ পাউন্ডের ট্রান্সফার ফি চূড়ান্ত হয়েছিল এবং তারা হাত মিলিয়েছিলেন। কিন্তু চুক্তি সইয়ের জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত ছিল না এবং পরের দুই দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি।

এই সুযোগটি লুফে নেন অ্যালেক্স ফার্গুসন। খবরটি জানার পর তিনি রয় কিনকে ফোন করে ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং জানান যে তাদের কাছে সব কাগজপত্র প্রস্তুত। কিন আর অপেক্ষা করেননি। ব্ল্যাকবার্নে যাওয়ার বদলে পরদিনই তিনি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নাম লেখান, যা তখন ব্রিটিশ ট্রান্সফার রেকর্ড ছিল।

 

৩. জন ওবি মিকেল: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে চেলসিতে

 

ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম পাগলাটে ও বিতর্কিত ট্রান্সফার ছিল জন ওবি মিকেলের। ২০০৫ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নরওয়ের ক্লাব লিন থেকে ১৮ বছর বয়সী নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার মিকেলকে সই করানোর ঘোষণা দেয় এবং তাকে নতুন খেলোয়াড় হিসেবে জার্সি পরিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। কিন্তু এরপরই নাটক শুরু হয়। মিকেল হঠাৎ করে লন্ডন চলে যান এবং জানান যে তার আসল ইচ্ছা ছিল চেলসিতে যোগ দেওয়া।

বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং এর ফলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, লিন এবং ফিফার মধ্যে আইনি লড়াই শুরু হয়। ইউনাইটেড চেলসির বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনে। শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সালে একটি সমঝোতায় আসে। চেলসি ১ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড দিয়ে মিকেলকে দলে নেয়, যার মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে। মিকেল চেলসিতে ১১ বছর কাটান এবং ক্লাবটির হয়ে বহু সাফল্য অর্জন করেন।

৪. উইলিয়ান: টটেনহাম থেকে চেলসিতে

 

২০১৩ সালের আগস্ট মাসে টটেনহাম ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার উইলিয়ানকে দলে নেওয়া নিশ্চিত করে ফেলেছিল। তিনি টটেনহামের হয়ে মেডিকেল পরীক্ষাও সম্পন্ন করেন। কিন্তু চুক্তির শেষ মুহূর্তে তার এজেন্ট ফোন করে জানান যে চেলসি তাকে চায়। উইলিয়ান তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন এবং টটেনহামের ট্রেনিং গ্রাউন্ড থেকে সরাসরি হোটেলে ফিরে যান।

পরে উইলিয়ান এক সাক্ষাৎকারে জানান, চেলসির প্রস্তাব তার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল এবং তিনি সেই সুযোগটি লুফে নিতে চেয়েছিলেন। টটেনহামের নিশ্চিত খেলোয়াড় হয়েও শেষ মুহূর্তে চেলসিতে যোগ দেওয়া তার ক্যারিয়ারের সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত চেলসিতে ছিলেন এবং ক্লাবটির হয়ে দুটি প্রিমিয়ার লিগ ও একটি ইউরোপা লিগ শিরোপা জেতেন।

এবেরেচি এজের সাম্প্রতিক ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে, ফুটবল ট্রান্সফারের দুনিয়ায় শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত কিছুই চূড়ান্ত নয়।