খেলাধুলা

ফুটবল মাঠেও মানবিকতার বার্তা: নরওয়ে বনাম ইসরায়েল ম্যাচে গাজার পাশে নরওয়ে

  প্রতিনিধি ২১ অগাস্ট ২০২৫ , ১:৪৫ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

ফুটবল মাঠেও মানবিকতার বার্তা: নরওয়ে বনাম ইসরায়েল ম্যাচে গাজার পাশে নরওয়ে

ফুটবল শুধুই একটি খেলা নয়, এটি অনেক সময় মানুষের দুঃখ-কষ্টের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশেরও মাধ্যম হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ে চুপ করে থাকতে পারেনি নরওয়ে ফুটবল ফেডারেশন। তাই তারা এক দারুণ পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইসরায়েলের বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচের লভ্যাংশ গাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

আগামী ১১ অক্টোবর অসলোর উল্লেভাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। নরওয়ে ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লিসে ক্লাভেনেস গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজার সাধারণ মানুষের ওপর দীর্ঘদিন ধরে যে একতরফা ভয়াবহ আক্রমণ চলছে এবং এতে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় দেখে আমরা কিংবা আমাদের সংস্থা চুপ করে থাকতে পারে না।” তিনি জানান, ম্যাচের টিকিট বিক্রির পুরো অর্থ গাজায় জরুরি সেবা দেওয়া বিভিন্ন মানবিক সংস্থাকে দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে এই ম্যাচের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। স্টেডিয়ামের ২৬ হাজার আসনের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে প্রায় তিন হাজার টিকিট কম ছাড়া হতে পারে।

নরওয়ের এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছে ইসরায়েলি ফুটবল ফেডারেশন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তারা নরওয়েকে স্মরণ করিয়ে দেয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলাকে। বিবৃতিতে তারা নরওয়ের প্রতি ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলে, “নিশ্চিত করুন অর্থটা যেন কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের হাতে না পড়ে কিংবা তিমি শিকারে ব্যয় না হয়।” তিমি শিকারের জন্য নরওয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা রয়েছে।

এই ম্যাচের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নরওয়ে ফুটবল ফেডারেশন উয়েফা এবং স্থানীয় পুলিশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। নরওয়ের এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইসরায়েলের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নিরাপত্তার কারণে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল তাদের আন্তর্জাতিক হোম ম্যাচগুলো দেশের বাইরে খেলছে। যেমন, নরওয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপের বাছাইয়ের প্রথম লেগের ম্যাচটি তারা হাঙ্গেরিতে খেলেছিল, যেখানে নরওয়ে ৪-২ গোলে জয়লাভ করে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে ইতালিয়ান সকার কোচেস অ্যাসোসিয়েশন (এআইএসি)। তারা এ বিষয়ে ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি জমা দিয়েছে এবং চায় যেন এই চিঠি উয়েফা ও ফিফাতেও পাঠানো হয়। চিঠিতে তাদের দাবি, “ইসরায়েলকে অবশ্যই থামতে হবে। ফুটবলকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।” এআইএসি’র সহসভাপতি জিয়ানকার্লো ক্যামোলেজ বলেন, “আমরা শুধু খেলার দিকে মনোযোগ দিতে পারতাম, কিন্তু আমরা মনে করি এটা ভুল।”

বর্তমানে ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ‘আই’ গ্রুপে নরওয়ে ৪ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে। অন্যদিকে, ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েল এবং ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ইতালি আছে তৃতীয় স্থানে। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর এবং ১৪ অক্টোবর ইতালির মুখোমুখি হবে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় মোট নিহত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যার মধ্যে ১৮ হাজার ৮৮৫ জনই শিশু। নরওয়ের ফুটবল ফেডারেশনের এই উদ্যোগ ফুটবলকে শুধুমাত্র একটি খেলা হিসেবে নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ এবং সংহতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছে।