প্রতিনিধি ২৫ অগাস্ট ২০২৫ , ১০:১১ এএম প্রিন্ট সংস্করণ
বলিউড এক স্বপ্নপুরীর নাম, যেখানে প্রতি বছর হাজারো তরুণ-তরুণী পাড়ি জমান নিজের স্বপ্নকে সত্যি করতে। কিন্তু এই রঙিন জগতের পেছনে লুকিয়ে আছে এক কঠিন বাস্তবতা, যেখানে টিকে থাকতে হলে শুধুমাত্র প্রতিভা নয়, প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, অদম্য জেদ আর ধৈর্য। সেই কঠিন পথের একজন সফল পথিক হলেন আজকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী কৃতি শ্যানন। কোনো ধরনের ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রমাণ করেছেন, আত্মবিশ্বাস আর ধৈর্যের জোরে যেকোনো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব। সম্প্রতি সিএনএন-নিউজ১৮ আয়োজিত ‘সি-শক্তি-২০২৫’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা অকপটে তুলে ধরেছেন, যা নতুনদের জন্য এক দারুণ অনুপ্রেরণা।
ছোটবেলায় অভিনয়ের প্রতি কৃতির কোনো আকর্ষণ ছিল না। বরং তার স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিলেন তিনি। কিন্তু জীবন তার জন্য অন্য পথ তৈরি করে রেখেছিল। ঘটনাক্রমে মডেলিংয়ের জগতে পা রাখার পর তার সামনে খুলে যায় বলিউডের দুয়ার। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার এক দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং যাত্রা।
কৃতি বলেন, “চলচ্চিত্র জগতে টিকে থাকতে হলে আপনাকে জেদি হতে হবে, আবেগ থাকতে হবে। এখানে কোনো শর্টকাট বলে কিছু নেই।” যারা এই পেশায় নতুন আসতে চান, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কেউ এসে আপনাকে সুযোগ দিয়ে যাবে না। একজন ‘আউটসাইডার’ হলে লড়াইটা আরও কঠিন হয়। আর এখানে বিনা পয়সায় কিছুই পাওয়া যায় না—না খাবার, না কাজ।” তার এই অকপট মন্তব্য চলচ্চিত্র জগতের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
ক্যারিয়ারের শুরুতে কৃতিকেও নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, “এই যাত্রায় মানুষ আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করবে। কেউ বলবে আপনি খাটো, কেউ বলবে লম্বা, আবার কেউ বলবে পাতলা। শরীরের আকার নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ চলতেই থাকবে। কিন্তু কেউ বলবে না—তুমি পারবে।” এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের প্রতি আস্থা রাখা যে কতটা জরুরি, তা তিনি বারবার মনে করিয়ে দেন। কৃতি জোর দিয়ে বলেন, “কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যই আমাকে এই জায়গায় এনেছে।”
নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের জন্য তার পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে ধৈর্য ধরতে হবে। সুযোগ পেতে যদি সময় লাগে, সেটাকে ব্যর্থতা ভাববেন না। বরং ভাববেন—এই সময়টা নিজেকে আরও উন্নত করার সুযোগ।” তার মতে, সঠিক সময়ে সবকিছু আপনা থেকেই ঘটতে শুরু করবে।
২০১৪ সালে টাইগার শ্রফের বিপরীতে ‘হিরোপন্তি’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে কৃতির অভিষেক হয়। প্রথম সিনেমাতেই তিনি দর্শকের মন জয় করেন এবং সিনেমাটিও বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পায়। তবে এরপরও তার পথচলা সহজ ছিল না। তীব্র প্রতিযোগিতা এবং ফিল্মি পরিবারের বাইরে থেকে আসার কারণে সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। ধৈর্য, অধ্যবসায় আর আত্মবিশ্বাসের জোরে তিনি একে একে ‘দিলওয়ালে’, ‘বরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’, ‘হাউসফুল ৪’, ‘বচ্চন পান্ডে’, ‘ভেড়িয়া’ এবং ‘আদিপুরুষ’-এর মতো সফল সিনেমায় অভিনয় করেন।
তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সাফল্য আসে ‘মিমি’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনের মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি কৃতিকে কারিনা কাপুর ও টাবুর মতো শক্তিশালী অভিনেত্রীর সঙ্গে ‘ক্রু’ সিনেমায় দেখা যাচ্ছে। এই দুই প্রভাবশালী অভিনেত্রীর মাঝেও তার সাবলীল অভিনয় সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। সম্প্রতি তার প্রযোজনায় তৈরি থ্রিলার সিনেমা ‘দো পাত্তি’ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে। নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘ব্লু বাটারফ্লাই ফিল্মস’-এর মাধ্যমে কৃতি এখন প্রযোজক হিসেবেও তার নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন। কৃতি শ্যাননের এই যাত্রা প্রমাণ করে যে, কেবল মেধা আর কঠোর পরিশ্রমই একজন মানুষকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।