খেলাধুলা

মুদি দোকানির ফোনে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্স, কী ঘটেছিল এরপর?

  প্রতিনিধি ১১ অগাস্ট ২০২৫ , ২:৫২ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ

মুদি দোকানির ফোনে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্স, কী ঘটেছিল এরপর?

ভারতের ছত্তিশগড়ের এক মুদি দোকানি হঠাৎ করেই চলে এলেন খবরের শিরোনামে। বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স, রজত পাতিদারের মতো তারকা ক্রিকেটাররা ফোন করেছেন তাকে! মনিশ নামের সেই দোকানদারের কাছে প্রথমে ব্যাপারটা বিশ্বাসই হয়নি। তাই তারকাদের সঙ্গে মজা করতে শুরু করেন তিনি, পরিচয় দেন নিজেকে ‘মহেন্দ্র সিং ধোনি’ হিসেবে। তবে শেষ পর্যন্ত তার ভুল ভাঙে যখন বাড়ির দরজায় পুলিশ হাজির হয়।

 

গল্পের শুরু

 

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৮ জুন। ছত্তিশগড়ের গারিয়াবন্দ জেলার দেবভোগ গ্রামের বাসিন্দা মনিশ একটি নতুন সিম কার্ড কেনেন। তিনি তার মোবাইলে সিমটি ঢুকিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ চালু করতেই দেখতে পান তাতে রজত পাতিদারের ছবি দেওয়া। মনিশ এবং তার বন্ধু খেমরাজ প্রথমে ভেবেছিলেন, এটা নিছকই কোনো মজার বিষয়। কিন্তু এরপরই একের পর এক ফোন আসা শুরু হয়। কেউ নিজেকে বিরাট কোহলি, আবার কেউ এবি ডি ভিলিয়ার্স হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন।

মনিশ ও খেমরাজও এই মজার খেলায় অংশ নেন। তারা নিজেদের পরিচয় দিতে শুরু করেন ‘মহেন্দ্র সিং ধোনি’ হিসেবে। এরপর ১৫ জুলাই এক অপরিচিত নম্বর থেকে মনিশের কাছে ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি বলেন, “ভাই, আমি রজত পাতিদার। এই নম্বরটা আমার। দয়া করে ফেরত দিন।” তখনও মনিশ মজা করে বলেন, “আমি এমএস ধোনি।”

 

যখন পুলিশ এলো

 

ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষে তিনি জানান যে তিনি পুলিশে অভিযোগ করবেন। মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই মনিশের বাড়িতে পুলিশ হাজির হয়। তখনই মনিশ বুঝতে পারেন, উল্টো প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি সত্যিই রজত পাতিদার ছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সিম কার্ডটি ফিরিয়ে দেন।

মূলত কোনো সিম কার্ড ৯০ দিন ধরে নিষ্ক্রিয় থাকলে ভারতের মোবাইল অপারেটর সংস্থাগুলো সেই সিমটি অন্য কাউকে দিয়ে দেয়। পাতিদারের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। তবে এখন তিনি তার নিজের নম্বর ফেরত পেয়েছেন।

গারিয়াবন্দ জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার নিশা সিনহা জানান, “রজত পাতিদার ৯০ দিন ধরে একটি সিম কার্ড ব্যবহার করছিলেন না। নিয়ম অনুযায়ী, এত দীর্ঘ সময় সিম বন্ধ থাকলে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। পরে নতুন করে বাজারে ছাড়া হলে মনিশ বিসি সেই সিমটি কিনে নেন।”

তিনি আরও বলেন, “ইন্দোর সাইবার সেলের সঙ্গে কথা বলার পর মনিশের অনুমতিতে সিম কার্ডটি রজত পাতিদারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আগে পাতিদার এই সিম ব্যবহার করায় অন্য ক্রিকেটাররা সেই নম্বরে ফোন করছিলেন। পাতিদার মধ্যপ্রদেশের সাইবার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের সিম ফেরত চান এবং সেই অনুরোধের ভিত্তিতেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানে কারও কোনো আইনি সমস্যা নেই।”

 

ভক্তের আনন্দ

 

সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে খেমরাজ জানান, “প্রথমে বিরাট কোহলি স্যার ফোন করেন। এরপর যশ দয়াল স্যার ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন কেন আমি রজত পাতিদারের ফোন ব্যবহার করছি। আমি বললাম, এটা তার নম্বর নয়।” খেমরাজ আরও যোগ করেন, “আধা ঘণ্টা পর এবি ডি ভিলিয়ার্স স্যারের ফোনও আসে।” তবে তারা ইংরেজি বোঝেন না বলেও জানিয়েছেন।

খেমরাজ বলেন, বিভ্রান্তি চরমে পৌঁছায়, যখন পুলিশ পরের ১০ মিনিটের মধ্যে গ্রামে এসে হাজির হয়। শুরুতে তারা বিষয়টি বুঝতে না পারলেও পুলিশের মাধ্যমেই রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। তারা জানতে পারেন, এটা ভিআইপি নম্বর এবং এই নম্বরটি ব্যবহার করতেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক পাতিদার।

ভুলবশত হলেও কয়েক মিনিটের জন্য কিংবদন্তি ক্রিকেট তারকাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে আনন্দিত মনিশ ও খেমরাজ। খেমরাজ বলেন, “আমি আরসিবির বড় ভক্ত। আমার দোকান ও বাসায় কোহলি স্যারের ছবিও আছে।” মনিশের কৃষক বাবা গজেন্দ্র সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ছেলে বিরাট কোহলির সঙ্গে কথা বলেছে, এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের বিষয়।”