প্রতিনিধি ২১ অগাস্ট ২০২৫ , ১২:৩২ পিএম প্রিন্ট সংস্করণ
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ আয়ের মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, তেলসহ দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও এখন দিশেহারা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নিত্যদিনের বাজার খরচের চাপ সামলাতে অনেকেই এখন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর সাশ্রয়ী মূল্যের ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। এই লাইনে এখন শুধু গৃহিণী বা দিনমজুর নয়, দেখা মিলছে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও।
রাজধানীর বিভিন্ন টিসিবি ট্রাক পয়েন্টে দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য কিনতে ভোর থেকেই মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন, কারণ বাজারে যে দামে পণ্য কেনা অসম্ভব, টিসিবির ট্রাকে তা অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। অনেক মানুষ নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চাইছেন। তাদের ভাষ্য, বেতন বাড়েনি, কিন্তু বাজারের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় সম্মান বাঁচিয়ে চলা কঠিন। তাই বাধ্য হয়েই তারা টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।
মূল্যস্ফীতির এই ধাক্কা সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে যারা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল কিংবা মেসে থাকেন, তাদের জন্য পড়াশোনার খরচ এবং জীবনযাপনের ব্যয় মেটানো এক দুঃস্বপ্ন। কবি নজরুল কলেজের একজন শিক্ষার্থী জানান, তাদের মেসের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, প্রতি সপ্তাহে একজন করে টিসিবির লাইনে দাঁড়াবেন। এই কাজের জন্য প্রায়ই তাদের ক্লাস মিস করতে হয়। কিন্তু এরপরও তারা এই কষ্ট করছেন, কারণ অন্যথায় মেসের আর্থিক চাপ সামলানো সম্ভব নয়।
বর্তমানে টিসিবির ট্রাকে তিনটি প্রধান পণ্য বিক্রি হচ্ছে—সয়াবিন তেল (প্রতি লিটার ১১৫ টাকা), মসুর ডাল (প্রতি কেজি ৭০ টাকা) এবং চিনি (প্রতি কেজি ৮০ টাকা)। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল এবং ১ কেজি চিনি কিনতে পারেন। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই টিসিবি কর্তৃপক্ষকে মাছ, মাংস এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি বিক্রির অনুরোধ জানান, যা তাদের খাদ্যাভ্যাসের জন্য জরুরি।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৬৫ লাখ পরিবারের কাছে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫৪ লাখ কার্ড সক্রিয়ভাবে ব্যবহার হচ্ছে। টিসিবির এই কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলেও বাজারের সঙ্গে কিছু পণ্যের দাম সমন্বয় করতে হয়েছে। বর্তমানে ১০ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে ৬০টি ট্রাকে এই পণ্য বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পণ্যের চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ার ইঙ্গিত দেয়।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কতটা জরুরি। কারণ, মূল্যবৃদ্ধি কেবল নিম্নবিত্তের নয়, মধ্যবিত্ত এবং শিক্ষার্থীদের জীবনকেও কঠিন করে তুলছে। যতক্ষণ না বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে, ততক্ষণ টিসিবির ট্রাকই তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে থাকবে। তবে এই সাময়িক সমাধান দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান নয়, বরং এটি দেশের অর্থনীতির একটি গভীর ক্ষতকে তুলে ধরে।